What Is Internet And World Wide Web, Their Differences And How They Work





আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ইন্টারনেট আর ওয়েবের মধ্যকার পার্থক্য নিয়ে। আমরা অনেক সময়ই এই দু'টো শব্দকে সমার্থক বলে মনে করি। আসলে এ দু'টো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। তবে এরা একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ইন্টারনেট হলো বিশাল এক প্রকার নেটওয়ার্কের জাল, যেখানে অনেকগুলো ছোট ছোট নেটওয়ার্ক একত্রে যুক্ত হয়ে ইন্টারনেট নামের এই বড় নেটওয়ার্কটিকে তৈরি করেছে। মূলত এই নেটওয়ার্কটি হলো যোগাযোগের নেটওয়ার্ক বা মাধ্যম, যা যোগাযোগের জন্য প্যাকেট সুইচিং প্রযুক্তিকে কাজে লাগায়। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের সারা বিশ্বের কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাবলেটসহ যত রকমের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আছে সবাই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আরোও যে পরিষেবাগুলো পাই সেগুলো হলো ইমেইল আদান প্রদান, তাৎক্ষণিক বার্তা বা ইন্সট্যান্ট মেসেজিং (Instant Messaging : IM), ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (Voice Over Internet Protocol) বা ভিওআইপি (VoIP) কলিং সিস্টেম, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ইত্যাদি। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে অবস্থিত সকল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসকে চিহ্নিত করার জন্য একটি বিশেষ নাম্বার দেয়া হয় যাকে বলা হয় আইপি এড্রেস (IP Address)। এই আইপি এড্রেস প্রদানের জন্য ইন্টারনেট টিসিপি/আইপি প্রটোকল সুটকে (TCP/IP Protocol Suite) কাজে লাগায়। আইপি এড্রেস বাইনারি ফরম্যাটে থাকে যা কিনা মানুষের বোধগম্য নয়, কেবলমাত্র কম্পিউটারের পক্ষেই বোধগম্য।

ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সেই ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরপানেট (ARPANet) নাম নিয়ে। এটা তৈরি করেছিলো Advanced Research Projects Agency (ARPA), তাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাদের সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ স্থাপন এবং তথ্য আদান-প্রদানের জন্য। পরবর্তীতে এই নেটওয়ার্কটিই ধাপে ধাপে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে এবং এর সাথে ছোট বড় এমন আরোও অনেক নেটওয়ার্ক যুক্ত হতে হতে আমেরিকা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে  আজকের এই ইন্টারনেট নাম ধারণ করেছে।

অপরদিকে বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) সংক্ষেপে ওয়েব (Web) হলো মূলত এমন একটি জায়গা যেটা কিনা সকল প্রকার ওয়েবসাইট এবং ওয়েব রিসোর্সগুলোর ধারক এবং বাহক। এখানে সকল প্রকার ওয়েবসাইট, ওয়েবপেইজ এবং ওয়েব রিসোর্স গুলো একে অপরের সাথে হাইপারলিঙ্ক (Hyperlink) বা ইউ আর এল (URL : Uniform Resource Locator aka Web Address) এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে। ওয়েব আসলে ইন্টারনেটেরই একটা পরিষেবা। কারন ওয়েবে ঢুকতে হলে আমাদের ইন্টারনেট কানেকশানসহ কম্পিউটার বা মোবাইল এবং একটি ওয়েব ব্রাউজার লাগবেই। আর এই ওয়েব ব্রাউজার হলো এক প্রকার সফটওয়্যার এপ্লিকেশন যা কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে ওয়েবে ঢুকে যেকোনো প্রকার তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আবার এই অনুসন্ধানকৃত তথ্যকে খুঁজে ফলাফল বের করে দেবে ওয়েবের এমন একটি পরিষেবা যাকে বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগল (Google), বিং (Bing), ইয়াহু (Yahoo!) ইত্যাদি।

ওয়েবের উৎপত্তি হয় ১৯৯১ সালে কারণ তার অনেক আগে থেকেই মানুষ তাদের মূল্যবান তথ্যগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছে। ওয়েবসাইট হলো যে কোনো ব্যক্তি কিংবা কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখার উপায়। এখানেই এসকল তথ্যগুলো টেক্সট, ইমেজ, অডিও, ভিডিও বা গ্রাফিক্স আকারে এক একটা ওয়েবপেইজে রাখা হয়। আর এই ওয়েবপেইজগুলোই হাইপারলিংক (Hyperlink) বা ইউ আর এল (URL) এর মাধমে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি পূর্ণাংগ ওয়েবসাইট তৈরি করে। আর ওয়েবসাইটগুলোকে ধারণ করার জন্য দরকার এমন কোনো একটা তথ্য ব্যবস্থা বা Information System যা কিনা প্রয়োজনের সময় এই ওয়েবসাইটগুলোতে থাকা তথ্যগুলোকে মানুষের দারে দারে পৌঁছে দেবে। এই ব্যবস্থাটার নামই হলো ওয়েব। এই সকল ওয়েবসাইট গুলোর জন্য একটা করে নাম এবং ওয়েব এড্রেস নির্বাচন করতে হয়, যার সূত্র ধরেই আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এগুলোকে একসেস করতে পারি। তবে যেহেতু এই ওয়েব এড্রেসগুলো মানুষের পঠনযোগ্য ভাষায় দেয়া হয় তাই এগুলোকে আবার কম্পিউটাররের পঠন উপযোগী ভাষা বা আইপি এড্রেসে রূপান্তরিত করার জন্য আরোও একটি ইন্টারনেটের পরিষেবার ধারস্ত হতে হয় যার নাম ডোমেইন নেম সিস্টেম (Domain Name System : DNS)। এই ডোমেইন নেম সিস্টেম ওয়েব এড্রেসকে আইপি এড্রেসে রূপান্তরিত করার পরেই কেবল পারে আমাদের কাঙ্খিত সেই ওয়েবসাইটটি যে সার্ভারে আছে সেখান থেকে তথ্য এনে দিতে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ধারনাটির প্রবর্তক হলেন টিম বার্নারস লি (Tim Burners Lee), এবং ওয়েবের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠানটি হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়াম (World Wide Web Consortium or W3 Consortium)।
  
সুতরাং উপরের সবগুলো তথ্য থেকে আমরা যে স্বারসংক্ষেপ পাই তা হলো, ইন্টারনেট হলো এক প্রকার বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মাধ্যম বা নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা এক কম্পিউটারের সাথে আরেক কম্পিউটারের যোগাযোগ স্থাপন করাতে পারি। অপরদিকে ওয়েব হলো ইন্টারনেটের একটি পরিষেবা, যা সকল প্রকার তথ্যের ধারক ও বাহক, যাকে একসেস করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেট প্রয়োজন।  


Comments